চুম্বক হচ্ছে একটি পদার্থ যা লোহা, নিকেল, কোবাল্ট ইত্যাদিকে আকর্ষণ করে এবং সুতা দ্বারা ঝুলিয়ে রাখলে যা সর্বদা উত্তর-দক্ষিণ দিকে মুখ করে থাকে।
চুম্বকের ধর্ম (Properties of magnet)
চুম্বকের মূল ধর্ম চারটি। যথা–
(ক) আকর্ষণী ধর্ম
(খ) দিকদর্শী ধর্ম
(গ) বিপরীত ধর্ম দুইটি প্রান্ত
(ঘ) চুম্বকন ধর্ম
(ক) আকর্ষণী ধর্ম : যে ধর্মের কারণে চুম্বক অন্যান্য অনেক পদার্থকে আকর্ষণ করে তাকে চুম্বকের আকর্ষণী ধর্ম বলে। চুম্বক লৌহ বা লৌহজাতীয় পদার্থকে আকর্ষণ করে। এক খণ্ড চুম্বককে লৌহ চূর্ণের মধ্যে ডুবালে, চুম্বকে লৌহচূর্ণ গুঁড়াগুলো লেগে যায়। এর অর্থ চুম্বক লৌহ চূর্ণকে আকর্ষণ করে।
(খ) দিকদর্শী ধর্ম : চুম্বক যে ধর্মের দ্বারা দিক নির্দেশ করতে পারে তাকে চুম্বকের দিকদর্শী ধর্ম বলে। একটি চুম্বককে পাকহীন সুতার সাহায্যে মুক্তভাবে ঝুলিয়ে দিলে কয়েকবার দোলার পর অবশেষে মোটামুটি ভৌগোলিকভাবে উত্তর ও দক্ষিণ দিক বরাবর মুখ করে স্থির থাকে এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিক নির্দেশ করে।
(গ) বিপরীত ধর্ম দুইটি প্রান্ত : প্রত্যেক চুম্বকের একটি উত্তর মেরু ও একটি দক্ষিণ মেরু থাকে। দুইটি চুম্বকের সমধর্মী দুইটি প্রান্ত কাছাকাছি আনলে একে অপরকে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীতধর্মী প্রান্তদ্বয় পরস্পরকে আকর্ষণ করে।
(ঘ) চুম্বকন ধর্ম : চুম্বক দ্বারা লৌহপাতকে ঘর্ষণ করলে লৌহ খণ্ডটি চুম্বকে পরিণত হয়। চুম্বকের এ ধর্মকে চুম্বকন ধর্ম বলে। সুতরাং, চুম্বকের যে ধর্মের দরুণ চুম্বক দ্বারা ঘষে লৌহ পদার্থকে চুম্বকের ধর্ম সঞ্চার করা যায় তাকে চুম্বকন ধর্ম বলে।
তবে সর্বসম্মতিক্রমে চুম্বকের দুটি ধর্ম সাব্যস্ত করা হয়েছে। যথা-
(১) আকর্ষণী ধর্ম এবং
(২) দিকদর্শী ধর্ম।
চুম্বকের শ্রেণিবিভাগ (Classifications of Magnet)
চুম্বক প্রধানত দুই প্রকার। যথা : ১. প্রাকৃতিক চুম্বক এবং ২. কৃত্রিম চুম্বক।
প্রাকৃতিক চুম্বক : যে চুম্বক প্রকৃতিতে অর্থাৎ পাহাড়, পর্বত ও খনি ইত্যাদিতে পাওয়া যায়, তাকে প্রাকৃতিক চুম্বক বলে। প্রাকৃতিক চুম্বকের আকর্ষণী ও দিকদর্শী গুণ খুব কম। এ কারণে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এ চুম্বকের ব্যবহার তেমন নেই বললেই চলে।
কৃত্রিম চুম্বক : পরীক্ষাগারে কৃত্রিম উপায়ে যে চুম্বক তৈরি করা হয়, তাকে কৃত্রিম চুম্বক বলে। এ চুম্বকের শক্তি বেশি। এতে কেবলমাত্র দুটি মেরু থাকে। শিল্পক্ষেত্রে ও বৈজ্ঞানিক কাজে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
কৃত্রিম চুম্বককে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা– ক. স্থায়ী চুম্বক এবং খ. অস্থায়ী চুম্বক।
স্থায়ী চুম্বক : যে চুম্বক পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করার পর চুম্বকত্ব শক্তিকে অপসারিত করলে যদি চুম্বকত্ব বজায় থাকে, তাকে স্থায়ী চুম্বক বলে। যথা : ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, স্ট্যালয় ইত্যাদি।
অস্থায়ী চুম্বক : যে চুম্বক পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করার পর চুম্বকত্ব শক্তিকে অপসারিত করলে চুম্বকত্ব নষ্ট হয়ে যায়, তাকে অস্থায়ী চুম্বক বলে। যথা : কাচা লোহার চুম্বক।
প্রস্তুতপ্রণালী অনুযায়ী কৃত্রিম চুম্বক আবার ছয় প্রকার। যথা-
দণ্ড চুম্বক : এটি ইস্পাতের তৈরি আয়তাকারবিশিষ্ট একটি স্থায়ী চুম্বক। যেহেতু এর আকার লম্বাটে, সেজন্য একে দণ্ড চুম্বক বলা হয়।
অশ্ব-ক্ষুরাকৃতি চুম্বক : যে সকল চুম্বকের আকার দেখতে ঘোড়ার ক্ষুরের মতো বা 'ট' আকৃতির হয়, তাকে অশ্ব-ক্ষুরাকৃতি চুম্বক বলে। এই চুম্বকের মেরুদ্বয় কাছাকাছি থাকায় চুম্বক শক্তি বেশি হয়। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক পরিমাপক যন্ত্রে এ চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
শলাকা চুম্বক : যে চুম্বকের মধ্যভাগ মোটা এবং দুপ্রাস্ত সূচের মতো সরু শলাকাবিশিষ্ট হয়, তাকে শলাকা চুম্বক বলে। এগুলো সাধারণত দিক দর্শক যন্ত্রে ও বৈদ্যুতিক মিটার যথা : ম্যাগনেটোমিটার, ট্যানজেন্ট গ্যালভানোমিটার ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
রিং চুম্বক : যে চুম্বকের আকার দেখতে আংটির মতো গোলাকার, তাকে রিং চুম্বক বলে।
চোঙ্গাকৃতি চুম্বক : যে চুম্বকের আকার দেখতে সিলিন্ড্রিক্যাল বা চোঙ্গাকৃতির মতো, তাকে চোঙ্গাকৃতি চুম্বক বলে।
শেল চুম্বক : পাত আকারের যে চুম্বকের এক পৃষ্ঠে উত্তর মেরু এবং অপর পৃষ্ঠে দক্ষিণ মেরু বিদ্যমান থাকে, তাকে শেল চুম্বক বলে।
চুম্বকের প্রয়োগ (Application of magnet)
১. সমুদ্রে জাহাজ চালাতে যে দিক নির্ণায়ক কম্পাস ব্যবহার করা হয়, তা স্থায়ী চুম্বক দ্বারা তৈরি।
২. কম্পিউটারের প্রধান বা মুখ্য মেমোরিতে স্থায়ী চুম্বক ব্যবহৃত হয়, যা সিরামিক চুম্বক নামে পরিচিত।
৩. মাইক্রোফোন ও লাউড স্পিকারে স্থায়ী চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
৪. বৈদ্যুতিক ঘণ্টা ও বৈদ্যুতিক পাখায় ইস্পাতের তৈরি অস্থায়ী চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
চুম্বক ক্ষেত্র কাকে বলে? (What is called magnetic field?)
উত্তরঃ কোনো চুম্বকের চারদিকে যে স্থান জুড়ে এর প্রভাব বিস্তৃত থাকে অর্থাৎ আকর্ষণজনিত অথবা বিকর্ষণজনিত প্রভাব হতে পারে সে অঞ্চলকে চুম্বক ক্ষেত্র বলে।
অ-চৌম্বক পদার্থ কী? (What are non magnetic materials?)
উত্তরঃ যে সকল পদার্থ চুম্বকের দ্বারা আকর্ষিত ও বিকর্ষিত হয় না এবং যাদেরকে চুম্বকে পরিণত করা যায় না তাকে অ-চৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন : কাচ, পানি, তামা, পিতল ইত্যাদি।
Answers & Comments
Answer:
Explanation:
চুম্বক কি? (What is Magnet in Bengali/Bangla?)
চুম্বক হচ্ছে একটি পদার্থ যা লোহা, নিকেল, কোবাল্ট ইত্যাদিকে আকর্ষণ করে এবং সুতা দ্বারা ঝুলিয়ে রাখলে যা সর্বদা উত্তর-দক্ষিণ দিকে মুখ করে থাকে।
চুম্বকের ধর্ম (Properties of magnet)
চুম্বকের মূল ধর্ম চারটি। যথা–
(ক) আকর্ষণী ধর্ম
(খ) দিকদর্শী ধর্ম
(গ) বিপরীত ধর্ম দুইটি প্রান্ত
(ঘ) চুম্বকন ধর্ম
(ক) আকর্ষণী ধর্ম : যে ধর্মের কারণে চুম্বক অন্যান্য অনেক পদার্থকে আকর্ষণ করে তাকে চুম্বকের আকর্ষণী ধর্ম বলে। চুম্বক লৌহ বা লৌহজাতীয় পদার্থকে আকর্ষণ করে। এক খণ্ড চুম্বককে লৌহ চূর্ণের মধ্যে ডুবালে, চুম্বকে লৌহচূর্ণ গুঁড়াগুলো লেগে যায়। এর অর্থ চুম্বক লৌহ চূর্ণকে আকর্ষণ করে।
(খ) দিকদর্শী ধর্ম : চুম্বক যে ধর্মের দ্বারা দিক নির্দেশ করতে পারে তাকে চুম্বকের দিকদর্শী ধর্ম বলে। একটি চুম্বককে পাকহীন সুতার সাহায্যে মুক্তভাবে ঝুলিয়ে দিলে কয়েকবার দোলার পর অবশেষে মোটামুটি ভৌগোলিকভাবে উত্তর ও দক্ষিণ দিক বরাবর মুখ করে স্থির থাকে এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিক নির্দেশ করে।
(গ) বিপরীত ধর্ম দুইটি প্রান্ত : প্রত্যেক চুম্বকের একটি উত্তর মেরু ও একটি দক্ষিণ মেরু থাকে। দুইটি চুম্বকের সমধর্মী দুইটি প্রান্ত কাছাকাছি আনলে একে অপরকে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীতধর্মী প্রান্তদ্বয় পরস্পরকে আকর্ষণ করে।
(ঘ) চুম্বকন ধর্ম : চুম্বক দ্বারা লৌহপাতকে ঘর্ষণ করলে লৌহ খণ্ডটি চুম্বকে পরিণত হয়। চুম্বকের এ ধর্মকে চুম্বকন ধর্ম বলে। সুতরাং, চুম্বকের যে ধর্মের দরুণ চুম্বক দ্বারা ঘষে লৌহ পদার্থকে চুম্বকের ধর্ম সঞ্চার করা যায় তাকে চুম্বকন ধর্ম বলে।
তবে সর্বসম্মতিক্রমে চুম্বকের দুটি ধর্ম সাব্যস্ত করা হয়েছে। যথা-
(১) আকর্ষণী ধর্ম এবং
(২) দিকদর্শী ধর্ম।
চুম্বকের শ্রেণিবিভাগ (Classifications of Magnet)
চুম্বক প্রধানত দুই প্রকার। যথা : ১. প্রাকৃতিক চুম্বক এবং ২. কৃত্রিম চুম্বক।
প্রাকৃতিক চুম্বক : যে চুম্বক প্রকৃতিতে অর্থাৎ পাহাড়, পর্বত ও খনি ইত্যাদিতে পাওয়া যায়, তাকে প্রাকৃতিক চুম্বক বলে। প্রাকৃতিক চুম্বকের আকর্ষণী ও দিকদর্শী গুণ খুব কম। এ কারণে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এ চুম্বকের ব্যবহার তেমন নেই বললেই চলে।
কৃত্রিম চুম্বক : পরীক্ষাগারে কৃত্রিম উপায়ে যে চুম্বক তৈরি করা হয়, তাকে কৃত্রিম চুম্বক বলে। এ চুম্বকের শক্তি বেশি। এতে কেবলমাত্র দুটি মেরু থাকে। শিল্পক্ষেত্রে ও বৈজ্ঞানিক কাজে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
কৃত্রিম চুম্বককে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা– ক. স্থায়ী চুম্বক এবং খ. অস্থায়ী চুম্বক।
স্থায়ী চুম্বক : যে চুম্বক পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করার পর চুম্বকত্ব শক্তিকে অপসারিত করলে যদি চুম্বকত্ব বজায় থাকে, তাকে স্থায়ী চুম্বক বলে। যথা : ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, স্ট্যালয় ইত্যাদি।
অস্থায়ী চুম্বক : যে চুম্বক পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করার পর চুম্বকত্ব শক্তিকে অপসারিত করলে চুম্বকত্ব নষ্ট হয়ে যায়, তাকে অস্থায়ী চুম্বক বলে। যথা : কাচা লোহার চুম্বক।
প্রস্তুতপ্রণালী অনুযায়ী কৃত্রিম চুম্বক আবার ছয় প্রকার। যথা-
দণ্ড চুম্বক : এটি ইস্পাতের তৈরি আয়তাকারবিশিষ্ট একটি স্থায়ী চুম্বক। যেহেতু এর আকার লম্বাটে, সেজন্য একে দণ্ড চুম্বক বলা হয়।
অশ্ব-ক্ষুরাকৃতি চুম্বক : যে সকল চুম্বকের আকার দেখতে ঘোড়ার ক্ষুরের মতো বা 'ট' আকৃতির হয়, তাকে অশ্ব-ক্ষুরাকৃতি চুম্বক বলে। এই চুম্বকের মেরুদ্বয় কাছাকাছি থাকায় চুম্বক শক্তি বেশি হয়। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক পরিমাপক যন্ত্রে এ চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
শলাকা চুম্বক : যে চুম্বকের মধ্যভাগ মোটা এবং দুপ্রাস্ত সূচের মতো সরু শলাকাবিশিষ্ট হয়, তাকে শলাকা চুম্বক বলে। এগুলো সাধারণত দিক দর্শক যন্ত্রে ও বৈদ্যুতিক মিটার যথা : ম্যাগনেটোমিটার, ট্যানজেন্ট গ্যালভানোমিটার ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
রিং চুম্বক : যে চুম্বকের আকার দেখতে আংটির মতো গোলাকার, তাকে রিং চুম্বক বলে।
চোঙ্গাকৃতি চুম্বক : যে চুম্বকের আকার দেখতে সিলিন্ড্রিক্যাল বা চোঙ্গাকৃতির মতো, তাকে চোঙ্গাকৃতি চুম্বক বলে।
শেল চুম্বক : পাত আকারের যে চুম্বকের এক পৃষ্ঠে উত্তর মেরু এবং অপর পৃষ্ঠে দক্ষিণ মেরু বিদ্যমান থাকে, তাকে শেল চুম্বক বলে।
চুম্বকের প্রয়োগ (Application of magnet)
১. সমুদ্রে জাহাজ চালাতে যে দিক নির্ণায়ক কম্পাস ব্যবহার করা হয়, তা স্থায়ী চুম্বক দ্বারা তৈরি।
২. কম্পিউটারের প্রধান বা মুখ্য মেমোরিতে স্থায়ী চুম্বক ব্যবহৃত হয়, যা সিরামিক চুম্বক নামে পরিচিত।
৩. মাইক্রোফোন ও লাউড স্পিকারে স্থায়ী চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
৪. বৈদ্যুতিক ঘণ্টা ও বৈদ্যুতিক পাখায় ইস্পাতের তৈরি অস্থায়ী চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
চুম্বক ক্ষেত্র কাকে বলে? (What is called magnetic field?)
উত্তরঃ কোনো চুম্বকের চারদিকে যে স্থান জুড়ে এর প্রভাব বিস্তৃত থাকে অর্থাৎ আকর্ষণজনিত অথবা বিকর্ষণজনিত প্রভাব হতে পারে সে অঞ্চলকে চুম্বক ক্ষেত্র বলে।
অ-চৌম্বক পদার্থ কী? (What are non magnetic materials?)
উত্তরঃ যে সকল পদার্থ চুম্বকের দ্বারা আকর্ষিত ও বিকর্ষিত হয় না এবং যাদেরকে চুম্বকে পরিণত করা যায় না তাকে অ-চৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন : কাচ, পানি, তামা, পিতল ইত্যাদি।